SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Admission
পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র - নিউটনের গতিসূত্র ও ভরবেগের নিত্যতা সূত্রের কয়েকটি ব্যবহার

১। ভূমির ওপর দাঁড়ানো :

মনে করি, এক ব্যক্তি ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। লোকটির পা ভূমির ওপর তার ওজনের সমান বল প্রয়োগ করে। এ বন ভূমির ওপর লোকটির ওজনের ক্রিয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ভূমিও সমান বলে লোকটির পা-কে খাড়া ওপরের দিকে ঠেলবে। ভূমির এ বল হলো প্রতিক্রিয়া। এ অবস্থায় ত্রিনা ও প্রতিক্রিয়া বল পরস্পরের সমান ও বিপরীত হবে। লোকটি যখন কোনো কর্নমান্ত ভূমির ওপর বা পানির ওপর দাঁড়াতে যান তখন ঘটনা অন্য রকম ঘটে। লোকটি নিচের দিকে নামতে থাকেন বা ডুবে যেতে থাকেন। কর্দমাক্ত ভূমি বা পানি সমান ও বিরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল দেয়া সত্ত্বেও এরূপ ঘটার কারণ হলো পানির অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক বল কঠিন ভূমির আন্তঃআণবিক বলের চেয়ে অনেক কম। লোকটির ওজন পানির ওপর ক্রিয়া করায় পানির অণুগুলো সহজে স্থানচ্যুত হয়ে আন্তঃআণবিক বৰধান বৃদ্ধি করে ফলে লোকটি নিচের দিকে নামতে থাকেন। এ জন্যই কর্দমাক্ত বা বালুকাময় জায়গায় হাঁটা কিছুটা অসুবিধাজনক।

২। হাঁটা: 

হাঁটার সময় আমরা সামনের পা দ্বারা মাটিতে খাড়াভাবে বল দেই আর পেছনের পা দ্বারা তির্যকভাবে PQ (চিত্র: ৪৩) বরাবর মাটিতে বল দেই। পেছনের পায়ের PQ বরাবর দেয় বলের ভূমি প্রতিক্রিয়া PR বরাবর কাজ করে। এখন এ প্রতিক্রিয়া বলকে অনুভূমিক ও উল্লখ উপাংশে ভাগ করা যায়। অনুভূমিক উপাংশ (R cos θ) আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয় আর উল্লম্ব উপাংশ (R sin θ) শরীরের ওজন বহন করতে সহায়তা করে।

চিত্র :৪.৩

আমরা দেখতে পাই দৌড় প্রতিযোগিতার দৌড়বিদরা দৌড়ের শুরুতে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকেন। ফলে দৌড় শুরু করার সময় তারা তির্যকভাবে মাটিতে বল প্রয়োগ করেন। ফলে ভূমির প্রতিক্রিয়াও তির্যকভাবে সামনের দিকে ক্রিয়া করে। এ প্রতিক্রিয়ার অনুভূমিক উপাংশ দৌড়বিদকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

৩। ঘোড়ায় গাড়ি টানা :

তোমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় তোমরা কি কেউ ঘোড়ার গাড়ি দেখেছো? প্রায় সবাই এক বাক্যে বলবে না। কারণ বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন এখন আর কোথাও নেই বললেই চলে। তবে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হিসেবে শিক্ষাক্রমে হয়তো ঘোড়ার গাড়ির ঘটনা বর্ণনা করতে বলা হয়েছে। ঘোড়া যখন গাড়িকে টানে তখন গাড়িও সমান বলে ঘোড়াকে টানে। তাহলে গাড়ি চলে কীভাবে? মনে করি, C গাড়িটিকে H ঘোড়ায় টানছে (চিত্র ৪.৪)। ঘোড়ার সাথে গাড়িটি একটি দড়ি দ্বারা সংযুক্ত। ঘোড়া গাড়িটিকে সামনের দিকে টানার জন্য নড়ির মধ্য দিয়ে গাড়ির ওপর যে টান T প্রয়োগ করবে সেটা হচ্ছে জিয়া বল। নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে গাড়িও দড়ির মাধ্যমে ঘোড়ার ওপর সমান ও বিপরীত টান T প্রয়োগ করবে। এ অবস্থায় গাড়ি চলছে কীভাবে এ প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে আসবে। আসলে ঘোড়া এগোবার জন্য পা দ্বারা তির্যকভাবে মাটিতে আঘাত করে ফলে ভূমিও একটি

চিত্র :৪.৪

সমান প্রতিক্রিয়া বল R ঘোড়ার পায়ের ওপর প্রয়োগ করে, এ প্রতিক্রিয়া বল অনুভূমিক ও উল্লখ উপাংশে বিভক্ত হয়ে যায়। উল্লম্ব উপাংশ V ঘোড়ার ওজনকে বহন করে আর অনুভূমিক উপাংশ F ঘোড়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করে। যখন এই F গাড়ির ঢাকা ও ভূমির মধ্যকার ঘর্ষণ বল f এর চেয়ে বেশি হয় তখনই শুধু গাড়িটি সামনের দিকে এগোবে।

৪। নৌকার শুন টানা: 

এককালের নদীমাতৃক বাংলাদেশে বড় বড় মাল বোঝাই নৌকার দেখা পাওয়া যেত। স্রোতের অনুকূলে দাঁড় টেনে আর স্রোতের প্রতিকূলে এন টেনে তাদের চলতে হতো। আজকাল ইঞ্জিনচালিত নৌকার বা ট্রলারের প্রচলন হওয়ায় এবং নদী ও খালে বিপুল সংখ্যক সেতু, পুল, কালভার্ট তৈরি হওয়ায় অযান্ত্রিক নৌযানে তথা নৌকায়ও আর শুন টানা হয় না। কিন্তু নানা ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে হয়তো শিক্ষাক্রমে এ উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

চিত্র :৪.৫

একখানি দড়ি দিয়ে কুল থেকে টেনে নৌকা সামনের দিকে এগিয়ে নেয়াকে গুনটানা বলে। এ ঘটনাকে ভেক্টররাশির বিভাজন ও নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। ধরা যাক, OR বরাবর দড়ির টানের বল ক্রিয়া করছে (চিত্র : ৪.৫) এ বল বিভাজিত হয়ে একটি বল নৌকার দৈর্ঘ্য বরাবর Oএর দিকে ক্রিয়া করে নৌকাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়। বলের অন্য উপাংশটি OA-এর লম্ব বরাবর OB-এর দিকে ক্রিয়া করে নৌকাকে কুলের দিকে নিতে চায় । পানির বিপরীত প্রতিক্রিয়া ও হালের সাহায্যে এ বলকে নাকচ করা হয়।

৫। বন্দুকের গুলি ছোঁড়া :

গুলি ছোঁড়ার পর বন্ধুককে পেছনের দিকে সরে আসতে দেখা যায়। ভরবেগের নিত্যতার সূত্র থেকে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। গুলি ছোঁড়ার পূর্বে বন্দুক ও গুলি উভয়ের বেগ শূন্য থাকে কাজেই তখন তাদের ভরবেগের সমষ্টি শূন্য। গুলি ছোঁড়ার পর সামনের দিকে গুলির কিছু ভরবেগ উৎপন্ন হয়। ভরবেগের নিত্যতার সূত্রানুযায়ী গুলি ছোঁড়ার আগের ভরবেগের সমষ্টি পরের ভরবেগের সমষ্টির সমান হতে হবে। সুতরাং গুলি ছোঁড়ার পরের ভরবেগের সমষ্টি সমান হতে হলে অর্থাৎ শূনা হতে হলে বন্দুকেরও গুলির সমান ও বিপরীতমুখী একটা ভরবেগের সৃষ্টি হতে হবে। ফলে বন্দুককেও পেছনের দিকে সরে আসতে দেখা যায়।

ধরা যাক, M ভরের বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়ার পর m ভরের গুলিটি v বেগে বেরিয়ে যাচ্ছে। ধরা যাক, বন্দুকটির বেগ V। গুলি ছোঁড়ার আগে বন্দুক ও গুলির ভরবেগের সমষ্টি শূন্য। গুলি ছোঁড়ার পরে বন্দুক ও গুলির মোট ভরবেগ হবে

MV + mv

বা, MV + mv = 0

বা, MV = -mv

:- V=-mMv...  ..(4.10)

(4.10) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, বন্দুক ও গুলির বেগ পরস্পর বিপরীতমুখী। অর্থাৎ গুলি ছোঁড়া হলে বন্দুকের পশ্চাৎ বেগের মান হবে  mMv

Content added || updated By

আরও দেখুন...